লিখেছেনঃ নিশম সরকার

screenshot-www.google.com-2017-03-26-01-32-04.png

আজ ২৭শে মার্চ। এই দিনে চট্টগ্রাম এর কালুরঘাট এ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক, বেলাল মোহাম্মদ, মেজর জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করবার জন্য নিয়ে আসেন। তিনি প্রথমে যে রাফ করেন সেখানে তিনি বঙ্গবন্ধুর কথা উল্লেখ করেননি, পরে বেলাল মোহাম্মদ তাকে বলেন, আপনার কি মনে হয়, বঙ্গবন্ধুর কথা উল্লেখ করা উচিত নয় কি? পরে তিনি পাঠ করেন, I, Major Zia, On behalf our great national leader, the supreme commander of Bangladesh, Sheikh Mujibur Rahman, do hereby proclaim the independence of Bangladesh. (ভাষণটি প্রথম কমেন্টে সংযুক্ত করা হলো)।

এই সাহসী পদক্ষেপটির জন্য মেজর জিয়া ইতিহাসে নন্দিত, তাকে ধন্যবাদ জানাই বীরোচিত এই কর্মের জন্য। আর, স্বাধীন বাংলাদেশে রাজাকার পুনর্বাসনের প্রতিটি কর্মের জন্য তার জন্য একরাশ ঘৃণা।

২৭শে মার্চ মেজর জিয়ার এই বীরোচিত কর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ তার দলই করলো, সেটিকে একবার ২৬শে মার্চ বানিয়ে, আবার তাকে স্বাধীনতার ঘোষক বানিয়ে। এটি আফসোসের ব্যাপার।

(বি: দ্র: ভাষণটি জিয়াউর রহমান শেষ করেন জয় বাংলা বলেই, জিন্দাবাদ নয় কিন্তু!)

সূত্রঃ ফেসবুক থেকে

10305418_10205597886936267_2888859387604001020_n 10845984_10205597887736287_8819264104356158958_n 285361_399028216860159_591581085_n

আমরা এখনো জানিনা এমন কতজন মনোয়ারা ক্লার্ক আছেন আমাদের মাঝে ।। তাইতো এটাই পড়ছি আর ভাবছি ……

শরীরের কয়েকটি জায়গায় পরিষ্কার দাগ এখনও ভীষণ স্পষ্ট, জন্মদাগ হিসাবেই এখন বলতে হয় তাকে। জন্মের পর তো আর তার পক্ষে এটা কীসের ক্ষত বোঝা সম্ভব হয়নি; পরে কৈশোরে জানতে পারলেন, দাগের উৎপত্তি পাকিস্তানি সেনাদের বেয়োনেটের খোঁচানি।

বেয়োনেটের আঘাত নিয়েই জন্ম তার। পাকিস্তানি সেনারা ধর্ষণের পর, বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে তার মাকে। খোঁচার দাগে মায়ের গর্ভের শিশুর দেহেও কেটে গেছে।

কামিজের একপাশটা তুলে দেখালেন ঘাড়ে, পিঠে, বাহুতে বড় বড় ক্ষত।

মৃত পড়ে ছিল মা। অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া শিশুটিকে বিশেষ ব্যবস্থায় পৃথিবীর আলোতে নিয়ে আসেন যুদ্ধের সময় বাংলাদেশে থাকা কানাডিয়ান চিকিৎসক হালকে ফেরি। তার স্থান হয় পুরান ঢাকার মাদার তেরিজা হোমে। সেখান থেকে কানাডিয়ান এক দম্পতি ৬ মাস বয়সে তাকে দত্তক সন্তান হিসাবে নিয়ে যান। নাম হয় তার মনোয়ারা ক্লার্ক।

একেবারেই বাংলা না জানা মনোয়ারা মুক্তিযুদ্ধের ৪৩ বছর পর দেশে এসেছেন, কেবলমাত্র জন্ম সনদ নিতে। এই সনদের জন্য এত আকুলতা তার আরো ৮/১০ বছর আগেও ছিল না। পারষ্পরিক বোঝাপড়ায় ফিনল্যাণ্ডের এক নাগরিককে বিয়ে করার পর যখন তার মেয়ে জন্মাল আর মেয়েটি হলো অটিস্টিক, তারপরই স্বামী বলতে থাকলো- অটিস্টিক বেবির জন্য তুমিই দায়ী।

“কারণ, আমার পরিবারের পরিচয় আছে। তোমার কোন পরিচয় নেই-মা নেই, বাবা নেই-তুমি একটা ওয়ার বেবি আর সেকারণেই তোমার বেবিটা অটিস্টিক হয়েছে।”

গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে আড্ডায়, ভীষণ উচ্ছ্বল আর প্রাণবন্ত হাসির মাঝে বিষণ্ন হয়ে উঠছিলেন মনোয়ারা, আবার দ্রুত সামলে নিচ্ছিলেন।

বলেন, “হ্যাঁ, আমার মা নেই, বাবা নেই-আমি জানি না তারা কারা বা আমার জন্ম কোথায়, কিন্তু এখন আমি একটা জিনিসই চাই: আমার জন্ম সনদ। আমার জন্ম সনদের জন্যই আমি বাংলাদেশে এসেছি।

“আই অ্যাম হিয়ার ফর মাই আইডেন্টিটি। আই অ্যাম হিয়ার ফর মাই ফ্যামিলি। বার্থ সার্টিফিকেট উইল মেইক মি মোর কনফিডেন্ট।”

একটু হেসে আবার বললেন, “আমার বার্থ সার্টিফিকেট, আমার ১০ বছর বয়সি জুলিয়া (তার মেয়ে) আর ঢাকায় একটা পাপ্পি(কুকুরের বাচ্চা) পেয়েছি। আমার মেয়েকে সেটা উপহার দিবো। ও খুব খুশি হবে। আর এইটাই হবে আমার পরিবার। আমার হ্যাপি পরিবার।”
গত ৩০ নভেম্বর ঢাকায় এসেছেন মনোয়ারা ক্লার্ক। এরমধ্যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে গিয়েছেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বিধ্বস্ত-ধর্ষণের শিকার নারীদের ছবিগুলো নিজের মোবাইল ফোনে ধরে রেখেছেন।

সেইসব ছবি মোবাইল থেকে দেখাচ্ছেন আর প্রতিবেদককে বলছেন, “দ্যাখো, আমার মা-ও তো এরকম ছিল হয়তো। এসব ফটোগ্রাফ দেখেছি আর কেঁদেছি। তারপর নিজেকে আবার শক্ত করেছি। মা আমার কে ছিল জানি না, কিন্তু বাংলাদেশ তো আমার মা।”

১৯৭২ সালের সমাজকল্যাণ অধিপ্তরের অফিসিয়াল কাগজে দেখা যায়, ইন্টার কান্ট্রি চাইল্ড অ্যাডপ্টেশন প্রজেক্টের অধীনে তাকে ক্লার্ক দম্পতির কাছে দেয়া হয়।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সহায়তায় পুরান ঢাকার মাদার তেরিজা হোমে যান তার জন্ম সনদ সংগ্রহের জন্য। সেটা সংগ্রহ করে সিটি কর্পোরেশনে জমা দেয়া হবে। দ্রুতই তিনি পেতে যাচ্ছেন তার জন্ম সনদ।

সিটি কর্পোরেশনও একটা আনুষ্ঠানিকতা করতে যাচ্ছেন বলে জানালেন তার সঙ্গে থাকা বাংলাদেশি কাজী চপল, যার সাথে ফেইসবুক যোগাযোগের মধ্য দিয়ে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন।

নিজভূমে আসার খুশি আড়াল করতে পারেনি তার বেদনা আর যন্ত্রণা। এক ফোঁটা বাংলা না জানা মনোয়ারা ইংরেজিতে বলে যাচ্ছিলেন, “ক্লার্ক পরিবারে বড় হতে হতে বুঝতে পারি চারপাশের সাদা চামড়ার শিশুরা আমার সাথে মিশতে চাইতো না, কথা বলতে চায় না। কারণ আমি ব্রাউন, আমি সাদা চামড়া না।

“যেই ক্লার্ক পরিবার আমাকে অ্যাডপ্ট করেছিল, তারা স্বামী-স্ত্রী আলাদা হয়ে গেল। আমি থেকে গেলাম মিসেস ক্লার্কের কাছে আর তিনি যে কী অসহনীয় ছিলেন। ১২/১৩ বছরের দিকে তারা আবার আমাকে অন্য একটি পরিবারে দিয়ে দিলেন।

“আমি আবার নতুন করে আরেকটা পরিবারের সদস্য হলাম। মার্গারেট নিকেল নামের সেই নারীর কাছ থেকেই পেয়েছি ভালোবাসা, পড়াশুনার সুযোগ। এখনো তার সাথে যোগাযোগ আছে।”

কখনো ভীষণ উচ্ছ্বল আবার পরমুহূর্তেই টলটলে চোখে অসংখ্য স্মৃতি যেন বের হতে চাই চাই করছিল।
“মাই হোল লাইফ ইজ ফুল নেগলিজেন্সিস, আপস অ্যান্ড ডাউন, ব্রোকেন রিলেশনশিপ, অল দিজ মেইড মি সো স্যাড। সো স্যাড। আই জাস্ট ওয়ান্ট মাই বার্থ সার্টিফিকেট। আই ওয়ান্ট টু লিভ মাই লাইফ অ্যাজ বাংলাদেশি।”

কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ভ্যাঙ্কুভারে মনোয়ারা একটি ওল্ডহোমে নার্সিংয়ের কাজ করেন। নার্সিংয়ে পড়াশুনা করতে করতেই তিনি চাকরি জুগিয়ে ফেলেন ২৩ বছর বয়সে। ২৭ বছর বয়সে বাড়িও করেন। ৭ বছরের সংসার জীবন কাটানোর পর নিত্যদিনকার অপমান আর সইতে না পেরে নিজেই ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছেন।

মনোয়ারা হঠাৎ বলা শুরু করেন, “জানো আমি একটা কুকুরের বাচ্চা পেয়েছি বসুন্ধরা সিটির সামনে। রাস্তার কুকুর। আমি সেটা নিয়ে এখন আমার কাছে রেখেছি। ওটা কানাডায় নিয়ে যেতে চাই। আমার বাংলাদেশের অফিসিয়াল পরিচয়, এই বাংলাদেশের পাপ্পি আর আমার মেয়ে-এই নিয়েই আমি, আমার বেঁচে থাকা, আমার সুখি হয়ে ওঠা। আমার এই স্ট্রাগলিং লাইফের এইটা আমার শান্তি”।

3142_523886784293640_2013454514_n.jpg

লেখক- ফজলুল বারী

আমি ঘৃনা করি সেই সব পশুদের,যারা মুখে পাকিস্থানি পতাকা একে খেলা দেখতে যায়,যারা পাকি ফ্ল্যাগ উচিয়ে বলে ম্যারি মি,বলে ৭১ সে তো আনেক পুরনো,আমি চিৎকার করে বলি তাদের একটি কথাই বারবার,শুওরের বাচ্চা

//উলঙ্গ মেয়েদেরকে গরুর মত লাথি মারতে মারতে, পশুর মত পিটাতে পিটাতে উপরে হেডকোয়ার্টারে দোতলা, তেতলা ও চারতলায় উলঙ্গ অবস্থায় দাঁড় করিয়ে রাখা হতো। পাঞ্জাবী সেনারা চলে যাওয়ার সময় লাথি মেরে আবার কামরার ভিতর ঢুকিয়ে তালা বদ্ধ করে রাখতো। বহু যুবতীকে হেডকোয়ার্টারের ওপরের তলার বারান্দায় মোটা লোহার তারের ওপর চুল বেধেঁ ঝুলিয়ে রাখা হতো। পাঞ্জাবীরা সেখানে নিয়মিত যাতায়াত করতো। কেউ এসে ঝুলন্ত উলঙ্গ যুবতীদের কোমরের মাংস বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করতো; কেউ তাদের বক্ষের স্তন কেটে নিয়ে যেত; কেউ হাসতে হাসতে তাদের যোনিপথে লাঠি ঢুকিয়ে দিয়ে বিকৃত আনন্দ উপভোগ করতো; কেউ ধারালো চাকু দিয়ে কোন যুবতীর পাছার মাংস আস্তে আস্তে কাঁটতো;

কেউ চেয়ারে দাঁড়িয়ে উন্নত বক্ষ নারীদের স্তনে মুখ লাগিয়ে ধারালো দাঁত দিয়ে স্তনের মাংস কামড়ে তুলে নিয়ে আনন্দে অট্টহাসি করতো!! কোনো মেয়ে এসব অত্যাচারে চিৎকার করলে তার যোনিপথে লোহার রড ঢুকিয়ে দিয়ে তৎক্ষণাৎ হত্যা করা হতো। প্রতিটি মেয়ের হাত পিছনের দিকে বাধা থাকতো। মাঝে মাঝে পাকিস্তানি সৈন্যরা সেখানে এসে উলঙ্গ ঝুলন্ত মেয়েদেরকে এলোপাতাড়ি বেদম প্রহার করতো। প্রতিদিনের এমন বিরামহীন অত্যাচারে মেয়েদের মাংস ফেটে রক্ত ঝরছিল; কারও মুখেই সামনের দিকে দাঁত ছিল না; ঠোঁটের দুদিকের মাংস কামড়ে এবং টেনে ছিড়ে ফেলা হয়েছিল; লাঠি ও লোহার রডের বেদম পিটুনিতে মেয়েদের আঙুল,
হাতের তালু ভেঙে থেঁতলে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল! এসব অত্যাচারিত ও লাঞ্ছিত মেয়েদেরকে প্রসাব 
পায়খানা করার জন্যেও হাত ও চুলের বাঁধন খুলে দেয়া হতো না। এমন ঝুলন্ত আর উলঙ্গ অবস্থাতেই তারা প্রসাব পায়খানা করতো। আমি প্রতিদিন সেখানে গিয়ে এসব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতাম…..”/

– সুইপার রাবেয়া, ৭১ এর অভিজ্ঞতা বর্ননায়!
/”….. মেয়েদের কারও লাশের স্তন পাইনি, যোনিপথ ক্ষত-বিক্ষত এবং পিছনের মাংস কাটা দেখেছি। মেয়েদের লাশ দেখে মনে হয়েছে – তাদের হত্যা করার
পূর্বে স্তন জোরপূর্বক টেনে ছিঁড়ে নেয়া হয়েছে, যোনিপথে বন্দুকের নল বা লোহার রড ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে…….”/

– ঢাকা পৌরসভার ছন্নুডোম, ২৯ মার্চে 
অভিজ্ঞতা বর্ননার অংশবিশেষ!/”….. পাঞ্জাবী, বিহারী ও পশ্চিম পাকিস্থানী পুলিশ জিভ চাটতে চাটতে ট্রাকের সামনে এসে মেয়েদের টেঁনে হিঁচড়ে নামিয়ে নিয়ে তৎক্ষণাৎ কাপড় চোপড় খুলে নিয়ে উলঙ্গ করে আমাদের চোখের সামনেই মাটিতে ফেলে কুকুরের মত ধর্ষণ করতো।…সারাদিন নির্বিচারে ধর্ষণ করার পর বিকালে পুলিশ হেডকোয়ার্টার বিল্ডিং এর ওপর উলঙ্গ করে লম্বা লোহার রডের সাথে চুল বেধে রাখা হতো। রাতে এসব নিরীহ বাঙালী নারীর ওপর অবিরাম ধর্ষণ চালানো হতো। গভীর রাতে মেয়েদের ভয়াল চিৎকারে ঘুম ভেঙে যেত। ভয়ংকর, আতঙ্কিত আর্তনাদ ভেসে আসতো- ‘বাঁচাও,আমাদের বাঁচাও, পানি দাও,একফোঁটা পানি দাও, পানি… পানি….’!!!”/- রাজারবাগ পুলিশ লাইনের আর্মস্ এসআই,

বিআরপি সুবেদার

খলিলুর রহমান!
[উৎস: বই:: ১) মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র
২) বীরাঙ্গনা ১৯৭১ -মুনতাসীর মামুন]//
-সানবীর খাঁন অরন্য

10659287_10204805364600569_2114645134609847348_n

মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস আমরা পালিয়ে বেড়িয়েছি মাগুরা, শ্রীপুর, যশোর, রাজশাহী- একটু খানি নিরাপত্তার আশায়। ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হল, কিন্তু আমরা রাজশাহীতে তখনও পরধীন। ১৭ ই ডিসেম্বর আমরা শহরের হেতেম খাঁ তে। বিকেলেই খবর পেলাম সেই রাতেই ফাইনাল ক্র্যাক ডাউনে নামবে পাকিস্তানী সৈন্যরা। পাক আর্মি, রাজাকার আর বিহারীদের যুগপৎ গণহত্যার পরিকল্পনা ছিল সেই রাতে রাজশাহী শহরে। ক্যান্টনমেন্টের দিক থেকে এগোবে পাকিরা, আর সিরইল কলোনী থেকে অপারেশন চালাবে বিহারীরা। রাজাকার আলবদরেরা অবস্থান নেবে শহরে। যেখানে যে বাঙ্গালীকে পাওয়া যাবে তাকেই হত্যা করা হবে। পরাজয় তো হয়েই গেছে তাদের, এবার তাদের মরণ কামড় দেবার পালা। সন্ধ্যার আগ দিয়ে আমাদের একটু বের হতে হল। খাজা ডাক্তারের বাসার কাছে পৌঁছুতেই মিত্র বাহিনীর বিমান হামলা শুরু হয়ে গেল। বাবা আমার কানে তুলো গুজে দিয়ে এক ওষুধের দোকানের গোডাউনে ঢুকিয়ে দিলেন। অবস্থা একটু স্বাভাবিক হবার পর অতি সন্তর্পণে বাড়ি ফিরলাম। সন্ধ্যার পর থেকে থেকে বিমান হামলা শুরু হল, শহরে তাই ব্ল্যাক আউট। আমরা যে বাসায় ছিলাম তার অবস্থান ডা জোবেদা খাতুনের বাসার ঠিক বিপরীত দিকে। বাড়ির মালিক সূর্‍্য মিয়া (নানা) বৃদ্ধ মানুষ। তিনি ঘোর পাকিস্তানপন্থী ছিলেন, কিন্তু শেষকালে এসে বুঝতে পেরেছেন কী ভুল করেছিলেন তিনি! তাঁর ছেলে কাজল (মামা) যুদ্ধে গেছেন। নানী অসম সাহসী মানুষ। গোটা তিনেক রামদা নিয়ে এসেছেন। বাবার হাতে একটা রামদা ধরিয়ে দিয়ে বললেন, জামাই, দরজার পাশে লুকিয়ে থাকবেন। আজ রাতে মরতে তো হবে সবাইকেই, মরার আগে অন্তত একটার কল্লা নামিয়ে দেবেন। নানার হাতে একটা রামদা ধরিয়ে দিয়ে বললেন, আপনি পারবেন তো? নানা মৃদু কন্ঠে উত্তর দিলেন, ইনশা-আল্লাহ। আরেকটা রামদা নানী নিজের হাতে ধরে রাখলেন, কী ঋজু তাঁর শরীর, কী আত্মপ্রত্যয়ী তাঁর দৃষ্টি! বাবা শক্ত হাতে রামদা ধরে দাঁড়ালেন সদর দরজার পাশে। হ্যাঁ, আমার বাবা মোল্লা এবাদত হোসেন যিনি জীবনে একটা মুরগিও জবাই করেননি, কোন দিন কুরবানী দেখেন নি। কী আগুন ঝরা দিন ছিল সেসব… যুদ্ধদিনের স্মৃতি নিয়ে ফিরব আবার…

9883_572948432747978_1182672899_n

দুর্বল চিত্তের পাঠকদের এই পোস্ট পড়তে নিরুৎসাহিত করছি,তারা শুধু এটুকু জেনে রাখুন ১৯৭১ এর নারী নির্যাতনের তুলনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। তবে,যারা পড়বেন তাদের কাছে অনুরোধ থাকবে সম্পূর্ণ পড়ার, নির্যাতনের এইসব বিবরণ পড়তে পড়তে যারা ব্যথিত হবেন, ক্ষুব্ধ হবেন তাদের কাছে অনুরোধ,পড়ুন, ভাবুন, নিজের বোধকে আঘাত করুন, ছড়িয়ে দিন লেখাটি।

” ঘরে ঢুকে দেখি,একি দৃশ্য।ও আল্লাহ,এমন দৃশ্য দেখার আগে কেনো আমার দুটি চোখ অন্ধ করলে না আল্লাহ। মেয়ের সামনে মাকে ধর্ষণ। কয়েকটি পাগলা কুত্তা আমার মাকে ও বড় বোনটিকে খাচ্ছে কামড়ে কামড়ে। এক পলক তাকানোর পর আর তাকাতেই পারছি না। তখন গায়ের জোরে একটা চিৎকার করলাম। সঙ্গে সঙ্গে আমার হাত মুখ বেঁধে ঘরের এক কোনায় ফেলে রাখলো। তারপর ঠিক আমার পায়ের কাছে মাকে এনে শুইয়ে দিয়ে একেবারে উলঙ্গ করে ফেলে। তারপর আর বলতে পারছি না। এসব দৃশ্য আমাকে দেখতে হচ্ছে। আমি যখনই চোখ বন্ধ করে রাখতাম,তখনই তাদের হাতের ধারালো একটি অস্ত্র দিয়ে চোখের চারপাশে কেটে দিত। এভাবেই চলল মায়ের ওপর সারারাত নির্যাতন।আর কিশোর হয়ে আমাকে তা দেখতে হয়েছে। রাত ভোর হয় হয় – এমন সময় তারা চলে গেছে, মা ততক্ষণে মৃত। যাবার সময় সঙ্গে নিয়ে গেল আমার অর্ধ মৃত রক্তাক্ত বোনটিকেও ” — ১৯৭১ এ পরিবারের সবাইকে হারানো কিশোর শফিকুরের আর্তি।

আগ্রাসন,সংঘর্ষ এবং যুদ্ধের অনাকাঙ্ক্ষিত কিন্তু অনিবার্য শিকার নারী। যে নারী সশস্ত্র সমরে যুক্ত হয় কিংবা যে হয় না – উভয়ই পরিণত হয় নির্যাতনের লক্ষবস্তুতে। নিরস্ত্র নারী পরিণত হয় সৈনিকের কামজ ক্ষুধা নিবারণের অনুষঙ্গে। সশস্ত্র নারীর ক্ষেত্রে এই নির্যাতন শুধু যৌনতার সীমায় আবদ্ধ থাকেনা,গোপন তথ্য আদায় তখন অন্যতম মুখ্য উদ্দেশ্য হয়ে ওঠে।তবে সংঘর্ষকালীন নারী নির্যাতনে যৌনতার ভূমিকা গৌণ হয়ে পড়ে বেশিরভাগ সময়েই,সেই সংঘর্ষ যখন গণহত্যায় রূপ নেয় তখন নারী হয়ে ওঠে জাতি বিদ্বেষ থেকে উদ্ভূত ঘৃণা প্রকাশের অন্যতম প্রধান সাবস্ট্রেট,নারী নির্যাতন হয়ে ওঠে জাতিগত নিধনের গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র।বুলেট এবং আগ্রাসী সৈনিকের পৌরুষ তখন দুটি সমান্তরাল অস্ত্রে পরিণত হয়,শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধা পর্যন্ত প্রতিটি নারী,যারা আক্রান্ত গোষ্ঠীর সদস্য,তখন পরিণত হয় নির্যাতনের লক্ষবস্তুতে।

সংঘর্ষকালীন ধর্ষণ এবং অন্যান্য নির্যাতনের মনস্তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করেছেন ক্যাসান্দ্রা ক্লিফোর্ড,ধর্ষণ কীভাবে হয়ে ওঠে গণহত্যার অনিবার্য অস্ত্র সে সম্পর্কে তিনি লিখেছেন Rape as a Weapon of War and it’s Long-term Effects on Victims and Society নামক অভিসন্দর্ভে – In war there are many weapons that may be employed and while the Kalashnikov or IED may be favored arms in modern warfare, there is one weapon all men carry and more often use. Men are choosing to use their bodies as weapons – in fact their manhood – to attack.The victim is raped in an effort to dehumanize and defeat the enemy,leaving an entire society with long-term suffering as victims cascade across generational divides.The scourge of rape as a weapon,affects not only the individual lives of the victims, but the entire family and community in which they live. Leaving their lasting marks on the entire country’s civil society, which in turn effects our globalized world.

১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও সহযোগীরা এই গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রের সর্বাত্মক ব্যবহার নিশ্চিত করে। মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই নয় মাসে ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতনকে একটি শিল্পের পর্যায়ে তুলে নিয়ে যায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। এই নির্যাতনের সংখ্যাগত মাত্রা সুবিশাল,এখন পর্যন্ত পাওয়া হিসেবে নির্যাতিত নারীর সংখ্যা মোটামুটি ভাবে সাড়ে চার লক্ষ,এবং সংখ্যাটা আরো বেশি হবার সম্ভাবনা মোটেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ধর্ষিত নারীদের বড় একটি অংশকে ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয়েছে,হত্যা করা হয়েছে শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে।কারো কারো মৃত্যু হয়েছে পৌনঃপুনিক ধর্ষণেই,একটি বুলেটেরও প্রয়োজন হয়নি সেজন্য।

নারী নির্যাতনের এসব ঘটনাকে শুধু আইনগত বিশ্লেষণের সাদাকালো চশমা পরে দেখা অর্থহীন। যুদ্ধের অবশ্যম্ভাবী শিকার নারী। কিন্তু আগ্রাসী সেনাবাহিনীকে নারী নির্যাতনে সরাসরি উৎসাহিত করেছে কর্তৃপক্ষ – এমন ঘটনা ইতিহাসে খুব বেশি ঘটেনি। এই বিরল নিদর্শন পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের এই দেশীয় দালালরা রেখে গেছে ১৯৭১ সালে,বাংলাদেশ ভূখণ্ডে। বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সামরিক কমান্ডার লে. জেনারেল নিয়াজি নিয়মিতভাবে উৎসাহিত করেছে তার অধীনস্থ সৈনিকদের – “গত রাতে তোমার অর্জন কী শের ? ” অর্জন বলতে ক’জন নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে তাই বোঝাত নিয়াজি। নির্বিচার ধর্ষণের পক্ষে সাফাই গেয়েছে নিয়াজি – You cannot expect a man to live, fight and die in East Pakistan and go to Jhelum for sex, would you? তবে নিয়াজির কথামত একাত্তরে নারী নির্যাতন শুধু ‘সেক্স’ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত ধর্ষণের ক্ষেত্রে বয়সের বিচার করা হয়নি মোটেও, নারীদের উপর চলেছে পর্যায়ক্রমিক নির্যাতন।সুজান ব্রাউনমিলার Against Our Will: Men, Women and Rape বইয়ে লিখেছেন,
“Rape in Bangladesh had hardly been restricted to beauty,girls of eight and grandmothers of seventy-five had been sexually assaulted .Pakistani soldiers had not only violated Bengali women on the spot; they abducted tens of hundreds and held them by force in their military barracks for nightly use. Some women may have been raped as many as eighty times in a night.”

একাত্তরে আমাদের নারীদের ওপর পাকিস্তানি নরপশুদের যৌন নির্যাতন কতটা ভয়াবহ, বীভৎস ছিল তা যুদ্ধ চলাকালে তেমন ভাবে প্রকাশিত হয় নি। ১৬ ই ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের পর বাঙ্গালী নারীর ওপর পাকিস্তানিদের নির্যাতন নিয়ে খুব কমই গবেষণা হয়েছে। কতজন বাঙ্গালী নারী সে সময় ধর্ষিতা হয়েছিলেন, কতজন ধর্ষিতা নারী গর্ভবতী হয়েছিলেন এবং কতজন যুদ্ধ শিশু জন্মগ্রহন করেছিল তা পুরোপুরি অনিশ্চিত। সামান্য কিছু সংখ্যক দলিলপত্র ছড়িয়ে ছিতিয়ে আছে সরকারী , বেসরকারী সংগঠন, বিদেশী মিশনারী সংস্থাগুলোর কাছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিখনে তাই সশস্ত্র যুদ্ধ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আর পুরুষদের বীরত্বগাঁথাই প্রাধান্য পেয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে সেই সব বীর নারীদের বীরত্বগাঁথা , শুধুমাত্র আমাদের সনাতনী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধে যে সকল নারী তাঁদের জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদটুকু হারিয়েছেন দেশমাতৃকার জন্য তাঁদের সেই অবদানটুকুও আমরা ইতিহাসে ঠাই করে দিতে পারিনি। স্বাধীনতার এতগুলো বছর পরেও যে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এতটুকু বদলেছে তা কিন্তু নয়। যে কোন জাতিকে দমন ও নির্মূল করার জন্য দুইটি অস্ত্র ব্যবহৃত হয়, একটি গনহত্যা আর ধর্ষণ। ১৯৭১ সালে নিরস্ত্র বাঙ্গালী জাতিকে চিরতরে নির্মূল করার জন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এই দুইটি অস্ত্রই অত্যন্ত নির্দয়ভাবে প্রয়োগ করে। পাকিস্তানি সৈন্যরা আমাদের নারীদের ওপর একাত্তরে কতো বীভৎসভাবে ধর্ষণ ও নির্যাতন করেছে তার ভয়াবহতা জানা যায় বীরাঙ্গনা আর প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায়।

১৯৭১ সালে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে সুইপার হিসেবে কর্মরত রাবেয়া খাতুনের বর্ণনায়-
” ১৯৭১ সনের ২৫শে মার্চ রাতে হানাদার পাঞ্জাবী সেনারা যখন রাজারবাগ পুলিশ লাইনের উপর অতর্কিতে হামলা চালায় তখন আমি রাজারবাগ পুলিশ লাইনের এস, এফ ক্যান্টিনে ছিলাম। আসন্ন হামলার ভয়ে আমি সারাদিন পুলিশ লাইনের ব্যারাক ঝাড়ু দিয়ে রাতে ব্যারাকেই ছিলাম। কামান, গোলা, লাইটবোম আর ট্যাঙ্কের অবিরাম কানফাটা গর্জনে আমি ভয়ে ব্যারাকের মধ্যে কাত হয়ে পড়ে থেকে থরথরিয়ে কাঁপছিলাম। ২৬ শে মার্চ সকালে ওদের কামানের সম্মুখে আমাদের বীর বাঙ্গালী পুলিশ বাহিনী বীরের মত প্রতিরোধ করতে করতে আর টিকে থাকতে পারি নাই। সকালে ওরা পুলিশ লাইনের এস,এফ ব্যারাকের চারদিকে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং ব্যারাকের মধ্যে প্রবেশ করে বাঙ্গালী পুলিশদের নাকে , মুখে, সারা দেহে বেয়নেট ও বেটন চার্জ করতে করতে ও বুটের লাথি মারতে মারতে বের করে নিয়ে আসছিল। ক্যান্টিনের কামরা থেকে বন্দুকের নলের মুখে আমাকেও বের করে আনা হয়, আমাকে লাথি মেরে, মাটিতে ফেলে দেয়া হয় এবং ওরা আমার উপর প্রকাশ্যে পাশবিক অত্যাচার করছিল আর কুকুরের মত অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছিল। আমার উপর উপর্যুপরি পাশবিক অত্যাচার করতে করতে যখন আমাকে একেবারে মেরে ফেলে দেওয়ার উপক্রম হয় তখন বাঁচবার আর কোন উপায় না দেখে আমি আমার প্রান বাঁচাবার জন্য ওদের নিকট কাতর মিনতি জানাচ্ছিলাম। আমি হাউমাউ করে কাদছিলাম , আর বলছিলাম আমাকে মেরোনা, আমি সুইপার, আমাকে মেরে ফেললে তোমাদের পায়খান ও নর্দমা পরিস্কার করার আর কেউ থাকবে না, তোমাদের পায়ে পড়ি তোমরা আমাকে মেরোনা, মেরো না, মেরো না, আমাকে মেরে ফেললে তোমাদের পুলিশ লাইন রক্ত ও লাশের পচা গন্ধে মানুষের বাস করার অযোগ্য হয়ে পড়বে। তখনও আমার উপর এক পাঞ্জাবী কুকুর, কুকুরের মতোই আমার কোমরের উপর চড়াও হয়ে আমাকে উপর্যুপরি ধর্ষণ করছিল। আমাকে এভাবে ধর্ষণ করতে করতে মেরে ফেলে দিলে রাজারবাগ পুলিশ লাইন পরিস্কার করার জন্য আর কেউ থাকবে না একথা ভেবে ওরা আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমাকে এক পাঞ্জাবী ধমক দিয়ে বলতে থাকে ,’ ঠিক হায় , তোমকো ছোড় দিয়া যায়েগা জারা বাদ, তোম বাহার নাহি নেকলেগা, হারওয়াকত লাইন পার হাজির রাহেগা।’ এ কথা বলে আমাকে ছেড়ে দেয়।

সেদিন সকাল থেকেই পাঞ্জাবী সেনারা ও তাদের দেশীয় দালালদের সাহায্যে রাজধানীর স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকা এবং অভিজাত জনপদ থেকে শত শত বাঙ্গালী যুবতী মেয়ে, রূপসী মহিলা এবং সুন্দরী বালিকাদের জীপে , মিলিটারি ট্রাকে করে পুলিশ লাইনের বিভিন্ন ব্যারাকে জমায়েত করতে থাকে। আমি ক্যান্টিনের ড্রেন পরিস্কার করছিলাম, আর দেখছিলাম আমার সম্মুখ দিয়ে জীপ থেকে আর্মি ট্রাক থেকে লাইন করে বহু বালিকা যুবতী ও মহিলাকে এস,এফ ক্যান্টিনের মধ্য দিয়ে ব্যারাকে রাখা হল। ব্যারাকে জায়গা না হওয়ায় শতের বেশী মেয়েকে হেডকোয়ার্টার বিল্ডিং এ উপর তালায় রুমে নিয়ে যাওয়া হল, আর অবশিষ্ট মেয়ে যাদেরকে ব্যারাকের ভিতর জায়গা দেওয়া গেল না তাঁদের বারান্দায় দাঁড় করিয়ে রাখা হল। অধিকাংশ মেয়ের হাতে বই ও খাতা দেখলাম, অনেক রুপসী যুবতীর দেহে অলংকার দেখলাম, তাঁদের মধ্যে অধিকাংশ মেয়ের চোখ বেয়ে অঝোরে অশ্রু পড়ছিল। এরপরই আরম্ভ হয়ে গেল সেই বাঙ্গালী নারীদের উপর বীভৎস ধর্ষণ। লাইন থেকে শত শত পাঞ্জাবী সেনারা কুকুরের মত জিভ চাটতে চাটতে ব্যারাকের মধ্যে উম্মত্ত অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে প্রবেশ করতে লাগল। ওরা ব্যারাকে ব্যারাকে প্রবেশ করে প্রতিটি যুবতী, মহিলা ও বালিকার পরনের কাপড় খুলে একেবারে উলঙ্গ করে মাটিতে লাথি মেরে ফেলে দিয়ে বীভৎস ধর্ষণে লেগে গেল। কেউ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেই নিরীহ বালিকাদের উপর ধর্ষণে লেগে গেল, আমি ব্যারাকে ড্রেন পরিস্কার করার অভিনয় করছিলাম আর ওদের বীভৎস পৈশাচিকতা দেখছিলাম। ওদের উম্মত্ত উল্লাসের সামনে কোন মেয়ে কোন শব্দ পর্যন্তও করে নাই, করতে পারে নাই। উম্মত্ত পাঞ্জাবী সেনারা এই নিরীহ বাঙ্গালী মেয়েদের শুধুমাত্র ধর্ষণ করেই ছেড়ে দেয় নাই- আমি দেখলাম পাক সেনারা সেই মেয়েদের উপর পাগলের মত উঠে ধর্ষণ করছে আর ধারাল দাঁত বের করে বক্ষের স্তন ও গালের মাংস কামড়াতে কামড়াতে রক্তাক্ত করে দিচ্ছে, ওদের উদ্ধত ও উম্মত্ত কামড়ে অনেক বাচ্চা মেয়ের স্তনসহ বুকের মাংস উঠে আসছিল, মেয়েদের গাল, পেট, ঘাড়, বক্ষ, পিঠের ও কোমরের অংশ ওদের অবিরাম দংশনে রক্তাক্ত হয়ে গেল। যে সকল বাঙ্গালী যুবতী ওদের প্রমত্ত পাশবিকতার শিকার হতে অস্বীকার করলো দেখলাম তৎক্ষণাৎ পাঞ্জাবী সেনারা ওদেরকে চুল ধরে টেনে এনে স্তন ছোঁ মেরে টেনে ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে ওদের যোনি ও গুহদ্বারের মধ্যে বন্দুকের নল, বেয়নেট ও ধারালো ছুরি ঢুকিয়ে দিয়ে সেই বীরাঙ্গনাদের পবিত্র দেহ ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছিল। অনেক পশু ছোট ছোট বালিকাদের উপর পাশবিক অত্যাচার করে ওদের অসার রক্তাক্ত দেহ বাইরে এনে দুজন দু পা দুদিকে টেনে ধরে চড়চড়িয়ে ছিঁড়ে ফেলে দিল, আমি দেখলাম সেখানে বসে বসে, আর ড্রেন পরিস্কার করছিলাম, শ্মশানের লাশ যেমন করে কুকুরের খাদ্য হয়, ঠিক তেমন করে পাঞ্জাবীরা মদ খেয়ে সব সময় সেখানকার যার যে মেয়ে ইচ্ছা তাকেই ধর্ষণ করছিল।

শুধু সাধারণ পাঞ্জাবী সেনারাই এই বীভৎস পাশবিক অত্যাচারে যোগ দেয় নাই, সকল উচ্চপদস্থ পাঞ্জাবী অফিসাররাই মদ খেয়ে হিংস্র বাঘের মত হয়ে দুই হাত বাঘের মত নাচাতে নাচাতে সেই উলঙ্গ বালিকা, যুবতী ও বাঙ্গালী মহিলাদের উপর সারাক্ষন পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ কাজে লিপ্ত থাকতো। কোন মেয়ে, মহিলা, যুবতীকে এক মুহূর্তের জন্য অবসর দেওয়া হয় নাই, ওদের উপর্যুপরি ধর্ষণ ও অবিরাম অত্যাচারে বহু কচি বালিকা সেখানেই রক্তাক্ত দেহে কাতরাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে, পরের দিন এ সকল মেয়ের লাশ অন্যান্য মেয়েদের সম্মুখে ছুরি দিয়ে কেটে কুটি কুঁচি করে বস্তার মধ্যে ভরে বাইরে ফেলে দিত। এ সকল মহিলা , বালিকা ও যুবতীদের নির্মম পরিণতি দেখে অন্যান্য মেয়েরা আরও ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে পড়তো এবং স্বেচ্ছায় পশুদের ইচ্ছার সম্মুখে আত্মসমর্পণ করতো। যে সকল মেয়ে প্রানে বাঁচার জন্য ওদের সাথে মিল দিয়ে ওদের অতৃপ্ত যৌনক্ষুধা চরিতার্থ করার জন্য ‘ সর্বতোভাবে সহযোগীতা করে তাঁদের পিছনে ঘুরে বেড়িয়েছে তাঁদের হাসি তামাশায় দেহদান করেছে তাদেরকেও ছাড়া হয় নাই। পদস্থ সামরিক অফিসাররা সেই সকল মেয়েদের উপর সম্মিলিতভাবে ধর্ষণ করতে করতে হঠাৎ একদিন তাকে ধরে ছুরি দিয়ে তার স্তন কেটে, শরীরের মাংস কেটে, যোনি ও গুহ্যদ্বারের মধ্যে সম্পূর্ণ ছুরি চালিয়ে দিয়ে হত্যা করে, অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে ওরা আনন্দ উপভোগ করত। এরপর উলঙ্গ মেয়েদেরকে গরুর মত লাথি মারতে মারতে পশুর মত পিটাতে পিটাতে উপরে হেডকোয়ার্টারে দোতলা, তেতলা ও চার তলায় উলঙ্গ অবস্থায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। পাঞ্জাবী সেনারা চলে যাওয়ার সময় মেয়েদেরকে লাথি মেরে আবার কামরার ভিতর ঢুকিয়ে তালাবদ্ধ করে চলে যেত।

বহু যুবতী মেয়েকে হেডকোয়ার্টারের উপর তলায় বারান্দার মোটা লোহার তারের উপর চুলের সাথে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়। প্রতিদিন পাঞ্জাবীরা সেখানে যাতায়াত করতো সেই ঝুলন্ত উলঙ্গ যুবতীদের কোমরের বেল্ট দিয়ে উম্মত্তভাবে আঘাত করতে থাকতো, কেউ তাঁদের বক্ষের স্তন কেটে নিয়ে যেত, কেউ হাসতে হাসতে তাঁদের যোনিপথে লাঠি ঢুকিয়ে আনন্দ করত, কেউ উঁচু চেয়ারে দাঁড়িয়ে উম্মুক্তবক্ষ মেয়েদের স্তন মুখ লাগিয়ে ধারাল দাঁত দিয়ে স্তনের মাংস তুলে নিয়ে আনন্দে অট্টহাসি করতো। কোন মেয়ে এসব অত্যাচারে কোন প্রকার চিৎকার করার চেষ্টা করলে তার যোনিপথ দিয়ে লোহার রড ঢুকিয়ে দিয়ে তাকে তৎক্ষণাৎ হত্যা করা হত। প্রতিটি মেয়ের হাত বাঁধা ছিল পিছনের দিকে শুন্যে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। প্রতিদিন এভাবে বিরামহীন প্রহারে মেয়েদের দেহের মাংস ফেটে রক্ত ঝরছিল, মেয়েদের কারো মুখের সম্মুখের দাঁত ছিল না, ঠোঁটের দুদিকের মাংস কামড়ে, টেনে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিল, লাঠি ও লোহার রডের অবিরাম পিটুনিতে প্রতিটি মেয়ের আঙ্গুল, হাতের তালু ভেঙ্গে, থেঁতলে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। এসব অত্যাচারিত ও লাঞ্চিত মহিলা ও মেয়েদের প্রসাব ও পায়খানা করার জন্য হাতের ও চুলের বাঁধন খুলে দেওয়া হতো না এক মুহূর্তের জন্য। হেডকোয়ার্টারের উপর তলায় বারান্দায় এই ঝুলন্ত উলঙ্গ মেয়েরা হাত বাঁধা অবস্থায় লোহার তারে ঝুলে থেকে সেখানে প্রসাব পায়খানা করত- আমি প্রতিদিন সেখানে গিয়ে এসব প্রসাব- পায়খানা পরিস্কার করতাম। আমি স্বচক্ষে দেখেছি, অনেক মেয়ে অবিরাম ধর্ষণের ফলে নির্মমভাবে ঝুলন্ত অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করেছে। প্রতিদিন সকালে গিয়ে সেই বাঁধন থেকে অনেক বাঙ্গালী যুবতীর বীভৎস মৃতদেহ পাঞ্জাবী সেনাদের নামাতে দেখেছি। আমি দিনের বেলাও সেখানে সকল বন্দী মহিলাদের পুতগন্ধ, প্রসাব- পায়খানা পরিষ্কার করার জন্য সারাদিন উপস্থিত থাকতাম। প্রতিদিন রাজারবাগ পুলিশ লাইনের ব্যারাক থেকে এবং হেডকোয়ার্টার অফিসের উপর তলা হতে বহু ধর্ষিতা মেয়ের ক্ষতবিক্ষত বিকৃত লাশ ওরা পায়ে রশি বেঁধে নিয়ে যায় এবং সেই জায়গায় রাজধানী থেকে ধরে আনা নতুন নতুন মেয়েদের চুলের সাথে ঝুলিয়ে বেঁধে নির্মমভাবে ধর্ষণ আরম্ভ করে দেয়। এসব উলঙ্গ নিরীহ বাঙ্গালী যুবতীদের সারাক্ষন পাঞ্জাবী সেনারা প্রহরা দিত। কোন বাঙ্গালীকেই সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হতো না। আর আমি ছাড়া অন্য কোন সুইপারকেও সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হতো না।

মেয়েদের হাজারো কাতর আহাজারিতেও আমি ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বাঙ্গালী মেয়েদের বাঁচাবার জন্য কোন ভুমিকা পালন করতে পারি নাই। এপ্রিল মাসের দিকে আমি অন্ধকার পরিষ্কার হওয়ার সাথে সাথে খুব ভরে হেডকোয়ার্টারের উপর তলায় সারারাত ঝুলন্ত মেয়েদের মলমুত্র পরিষ্কার করছিলাম। এমন সময় সিদ্ধেশ্বরীর ১৩৯ নং বাসার রানু নামে এক কলেজের ছাত্রীর কাতর প্রার্থনায় আমি অত্যন্ত ব্যাথিত হয়ে পড়ি এবং মেথরের কাপড় পরিয়ে কলেজ ছাত্রি রানুকে মুক্ত করে পুলিশ লাইনের বাইরে নিরাপদে দিয়ে আসি। স্বাধীন হওয়ার পর সেই মেয়েকে আর দেখি নাই। ১৯৭১ সনের ডিসেম্বরে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনী বাংলাদেশ মুক্ত করার পূর্ব পর্যন্ত পাঞ্জাবী সেনারা এসকল নিরীহ বাঙ্গালী মহিলা, যুবতী ও বালিকাদের উপর এভাবে নির্মম-পাশবিক অত্যাচার ও বীভৎসভাবে ধর্ষণ করে যাচ্ছিল। ডিসেম্বরের প্রথমদিকে মিত্রবাহিনী ঢাকায় বোমাবর্ষণের সাথে সাথে পাঞ্জাবী সেনারা আমাদের চোখের সামনে মেয়েদের নির্মমভাবে বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে হত্যা করে। রাজারবাগ হেডকোয়ার্টার অফিসের উপর তলায়, সমস্ত কক্ষে, বারান্দায় এই নিরীহ মহিলা ও বালিকাদের তাজা রক্ত জমাট হয়েছিল। ডিসেম্বরের মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী রাজধানীতে বীর বিক্রমে প্রবেশ করলে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের সকল পাঞ্জাবী সেনা আত্মসমর্পণ করে।”

বীরাঙ্গনা তারা ব্যানার্জি তার বর্ণনায় বলেন সেই দিনগুলোর কথা –
” ২৭ শে মার্চ অন্ধকার থাকতেই আমরা গ্রামের বাড়ীতে রওয়ানা হলাম সামান্য হাতব্যাগ নিয়ে। গাড়ি , রিকশা কিছুই চলছে না। হঠাৎ স্থানীয় চেয়ারম্যানের জীপ এসে থামল আমাদের সামনে। বাবাকে সম্বোধন করে বললেন, ডাক্তারবাবু আসেন আমার সঙ্গে। কোথায় যাবেন নামিয়ে দিয়ে যাবো। বাবা আপত্তি করায় চার পাচজনে আমাকে টেনে জীপে তুলে নিয়ে গেল। কোন গোলাগুলির শব্দ শুনলাম না। বাবা-মা কে ধরে নিয়ে গেল নাকি মেরে ফেললো বলতে পারবো না। গাড়ি আমাকে নিয়ে ছুটল কোথায় জানি না। কিছুক্ষন হয়ত জ্ঞান হারিয়ে ছিল আমার। সচেতন হয়ে উঠে বসতেই বুঝলাম এটা থানা, সামনে বসা আর্মি অফিসার।
অফিসারটি পরম সোহাগে আমাকে নিয়ে জীপে উঠলো। কিছুদুর যাবার পর সে গল্প জুড়লো অর্থাৎ কৃতিত্বের কথা আমাকে শোনাতে লাগলো। আমার মাথায় কিছুই ঢুকছিল না। হঠাৎ ঐ চলন্ত জীপ থেকে আমি লাফ দিলাম। ড্রাইভিং সিটে ছিল অফিসার, আমি পেছনে, পেছনে দু জন জোয়ান। আমার সম্ভবত হিতাহিত জ্ঞান রহিত হয়ে গিয়েছিল। যখন জ্ঞান হলো দেখি মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা, আমি হাসপাতালের বিছানায়। ছোট্ট হাসপাতাল। যত্নই পেলাম, একজন গ্রামের মেয়েকে ধরে এনেছে আমার নেহায়েত প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য। মেয়েটি গুন গুন করে কেঁদে চলেছে। সন্ধ্যায় অফিসারটি চলে গেল। যাবার সময় আমাকে হানি, ডার্লিং ইত্যাদি বলে খোদা হাফেজ করল। দিন তিনেক শুয়ে থাকার পর উঠে বসলাম। সুস্থ হয়েছি এবার। আমাদের ভেতর সংস্কার আছে পাঁঠা বা মহিষের খুঁত থাকলে তাকে দেবতার সামনে বলি দেওয়া যায় না। আমি এখন বলির উপযোগী।

প্রথম আমার উপর পাশবিক নির্যাতন করে একজন বাঙালি রাজাকার। আমি বিস্ময়ে বোবা হয়ে গিয়েছিলাম। অসুস্থ দেহ, দুর্বল যুদ্ধ করতে পারলাম না। লালাসিক্ত পশুর শিকার হলাম। ওই রাতে কতজন আমার উপর অত্যাচার করেছিল বলতে পারবো না, তবে ছ’সাত জনের মতো হবে। সকালে অফিসারটি এসে আমাকে ঐ অবস্থায় দেখলো তারপর চরম উত্তেজনা, কিছু মারধরও হলো। তারপর আমাকে তার জীপে তুলে নিল, আমি তৃতীয় গন্তব্যে পৌঁছোলাম।”

পাবনার মোসাম্মৎ এসবাহাতুন বলেন ,
১৯৭১ সালের জুলাই মাসে পাক বাহিনী আমার বাবার বাড়ী নতুন ভাঙ্গাবারীতে প্রায় ৫০/৬০ জন অপারেশনে যায়। আমি আমার বাবার বাড়ীতে পাঁচ মাসের একটি ছেলে নিয়ে ঘরের মধ্যে বসে আছি। আমার সাথে আরও ৫/৬ জন মহিলা ঘরের মধ্যে বসে গল্প করছে। এমন সময় আমাদের বাড়ীর মধ্যে ৭/৮ জন পাক সেনা ঢুকে পড়ে। তারা ঢুকে পড়ার সাথে সাথে অন্যান্য যে মেয়েরা ছিল তারা মিলিটারি দেখে দৌড়াদৌড়ি করে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। কিন্তু আমার কোলে বাচ্চা থাকার জন্য আমি বেরুতে পারি নাই। পাক সেনাদের ৫/৬ জন আমার ঘরে ঢুকে পড়ে। আমার বাবা ও ভাই এসে বাঁধা দিতে চাইলে দুই জন পাক সেনা তাঁদের বুকে রাইফেল ধরে রাখে আর তিন/ চার জন আমাকে ঘরের মধ্যে ধরে ফেলে আমার নিকট হতে আমার পাঁচ মাসের বাচ্চা ছিনিয়ে বিছানার উপর ফেলে দিয়ে আমার উপর পাশবিক অত্যাচার শুরু করে। আমার শিশু সন্তান কাঁদতে থাকে। তারপর আমার বাবা ও ভাই এর বুকে রাইফেল ধরে পালাক্রমে সবাই এসে এসে তাদের পাশবিক অত্যাচার চালিয়ে যায়। এই ৪/৫ জন মিলে প্রায় এক ঘণ্টা আমার উপর পাশবিক অত্যাচার করে। তারপর চলে যায়। আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকি। তার আধ ঘণ্টা পর আমার জ্ঞান ফিরে পাই।

বীরাঙ্গনা মোসাম্মৎ রাহিমা খাতুন এর বর্ণনায় –
১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে একদিন ভোর রাত্রি প্রায় ৭০/৮০ জন পাকসেনা আমার স্বামীর গ্রামে অর্থাৎ আউনদাউন নামক গ্রামে যায়। আমি ৭ মাসের শিশুসহ ঘুমিয়ে আছি। ভোর রাত্রিতে আমার স্বামী মিলিটারির শব্দ পেয়ে ঘর হতে বেরিয়ে পালিয়ে যায়। ১০ জনেরও বেশী পাকসেনা আমাদের বাড়ী আসে এবং ঘরের দরজায় লাথি মেরে দরজা ভেঙে ফেলে এবং আমার শিশু সন্তানকে আমার নিকট থেকে জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে মাটিতে দুই- তিন আছাড় দিয়ে হত্যা করে। তারপর আমাকে এক এক করে ৭ জন পাকসেনা পাশবিক অত্যাচার করে। প্রায় ২/৩ ঘণ্টা আমার উপর পাশবিক অত্যাচার করার পর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তার আধ ঘণ্টা পর আমি জ্ঞান ফিরে শুনতে পাই যে আমার তিনজন জা ‘কেও অন্য পাকসেনারা গ্রামের আরও ৩০টি মেয়ের সাথে জোর করে ধরে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর আর তাঁদের কারোরই খোঁজ খবর পাওয়া যায় নাই। ঐ একই দিনে ঐ গ্রামের প্রায় ১০/১২ জন মহিলার উপর পাশবিক অত্যাচার করে। বেশ কিছুদিন চিকিৎসা হবার পর আমি সুস্থ হয়ে উঠি।

গাজীপুরের বীরাঙ্গনা পরী, তার বর্ণনা থেকেও উঠে আসে অনেক অজানা তথ্য।
“গাড়িতে ওঠানোর পরই চোখ বেধে ফেলল। অনেকক্ষণ যাবার পরে একটি ক্যাম্পে নিয়ে চোখ খুলল। চোখ খোলার পরে দেখি এখানে আরো অনেক মেয়ে,সবাই চুপ করে আছে। আমি কিছু বলতে চাইলাম। কিন্তু অন্যরা ইশারায় না করল। কিছুক্ষণ পর আমি কান্না শুরু করি। তখন পাশ দিয়ে একজন যাচ্ছিল। সে এসেই কোন কথা না বলে আমাকে লাথি মারল এবং আমার গায়ের উপর প্রস্রাব করে দিল। এটা চলে যাওয়ার পর আমি বকাবকি শুরু করলাম। অন্যরা কিছুই বলে না। শুধু ইশারায় এটা সেটা বোঝাতে চেষ্টা করে। বিকাল হতে না হতেই বুট জুতা পরা কয়েকজন এল। আসার পথে যেসব মেয়ে পড়ছে,তাদেরকে লাথি,কিল,ঘুষি মারছে। এগুলো দেখেই আমি চুপ,একেবারে চুপ। তিনজন এসে আমার ওপর নির্যাতন শুরু করল। তারা আমাকে নিয়ে আনন্দ শুরু করল, এমনভাবে আনন্দ করছে, যেন তাদের কাছে মনে হচ্ছে আমি একটা মরা গরু আর ঐগুলো শকুন। আমার সারা শরীরটাকে টেনে কামড়ে যা খুশি তাই করছে। এক সময় আমি যখন আর সহ্য করতে পারছি না তখন একটু একটু কষ্টের শব্দ করছি।
তখন অন্য এক মেয়ে ইশারা দিল চুপ করতে। কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম,কিন্তু আর পারছি না। নিজের অজান্তেই চিৎকার আইসা গেল, চিৎকারের দিবার সঙ্গে সঙ্গে শুরু করল মাইর। মাইর কারে কয়। একজন আইসা আমার মুখের মধ্যে প্রস্রাব করে দিল। ইচ্ছামতো নির্যাতন করল এবং মারল। যাবার সময় আবার হাত বেঁধে রাইখা গেল। কিছুক্ষণ পর একসাথে আসলো অনেকজন। মেয়েদের ভিতর থাইকা ১৫/২০ জনরে সবাইর সামনে গণহারে ধর্ষণ শুরু করল। কারো মুখে কোন কথা নাই। মাঝে মাঝে শুধু একটু শব্দ আসে কষ্টের গোঙ্গানির। একজন সিগারেট খাচ্ছে আর তার পাশে যে ছিল তার গায়ে জ্বলন্ত সিগারেট ধরে রাখছে,অন্য একজন ধর্ষণ করছে। ঐ মেয়েটির অবস্থা দেইখা নিজের সব ভুলে গেলাম। কি বিশ্রীভাবে যে ধর্ষণ করছে মোটকথা তারা আমাদেরকে মানুষ বলেই মনে করতেছে না। এক সময় তারা চলে গেল। একটু-আধটু কথা বলছে সবাই। কিছুক্ষণ পর সবাই চুপ। কিছুক্ষণ পর একজন পাকি এল এবং একটি মেয়েকে ধরে নিয়ে গেল। এর কিছুক্ষণ পর দু’জন তাকে নিয়ে এল। এসেই তার সব কাপড় খুলল এবং গরম লোহা দিয়ে তার সমস্ত শরীরে ছ্যাঁকা দিল,শেষে তার গোপন অঙ্গের ভিতরে বন্দুকের নল ঢুকাইয়া গুলি করে মেরে ফেলল। যখন বন্দুকের নল ঢুকাচ্ছে তখন সে একটা চিৎকার দিয়েছিল। মনে হয়,পৃথিবীর সব কিছুই তখন থমকে গেছে। তারপর তাকে নিয়ে গেল। দুই একদিন পরে জানতে পারলাম, তারা ভুল করে ঐ মেয়েকে নিয়েছিলো। তারা আমাকে নিতে এসেছিলো।

বরিশালের বীরাঙ্গনা ভাগীরথীর বীরত্বের ইতিহাসও আজ কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। স্বাধীনতার পর এই বীরাঙ্গনার বীরত্বের ইতিহাস ছাপা হয় , ৩ রা ফেব্রুয়ারী ১৯৭২ , দৈনিক আজাদ পত্রিকায়।
বাংলা মায়ের নাড়ী ছিঁড়ে জন্ম নিয়েছিলেন যে সোনার মেয়ে সে ভাগীরথীকে ওরা জ্যান্ত জীপে বেঁধে শহরের রাস্তায় টেনে টেনে হত্যা করেছে। খান দস্যুরা হয়তো পরখ করতে চেয়েছিল ওরা কতখানি নৃশংস হতে পারে। বলতে হয় এক্ষেত্রে ওরা শুধু সফল হয়নি, বর্বরতার সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।অষ্টাদশী ভাগীরথী ছিল বরিশাল জেলার পিরোজপুর থানার বাঘমারা কদমতলীর এক বিধবা পল্লীবালা। বিয়ের এক বছর পর একটি পুত্র সন্তান কোলে নিয়েই তাকে বরন করে নিতে হয় সুকঠিন বৈধব্য। স্বামীর বিয়োগ ব্যাথা তখনও কাটেনি। এরই মধ্যে দেশে নেমে এল ইয়াহিয়ার ঝটিকা বাহিনী। মে মাসের এক বিকালে ওরা চড়াও হল ভাগীরথীদের গ্রামে। হত্যা করলো অনেককে, যাকে যেখানে যেভাবে পেলো। এ নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের মধ্যেও ভাগীরথীকে ওরা মারতে পারল না। অর দেহ-লাবন্য পাকিদের মনে যে লালসা জাগিয়েছিল তাতেই হার মানল তাঁদের রক্ত পিপাসা। ওকে ট্রাকে তুলে নিয়ে এল পিরোজপুরে। তারপর ক্যাম্পে তার উপর চালানো হল হিংস্র পাশবিক অত্যাচার।

সতি নারী ভাগীরথী । এ পরিস্থিতিতে মৃত্যুকে তিনি একমাত্র পরিত্রানের উপায় বলে ভাবতে লাগলেন। ভাবতে ভাবতেই এক সময় এল নতুন চিন্তা হ্যাঁ মৃত্যুই যদি বরন করতে হয় ওদেরই বা রেহাই দেব কেন? ভাগীরথী কৌশলের আশ্রয় নীল এবার। এখন আর অবাধ্য মেয়ে নয় দস্তুরমত খানদের খুশি করতে শুরু করল, ওদের আস্থা অর্জনের আপ্রান চেষ্টা চালাতে লাগাল। বেশি দিন লাগল না অল্প কদিনেই নারীলোলূপ সেনারা ওর প্রতি দারুণ আকর্ষণ অনুভব করল। আর সেই সুযোগে ভাগীরথী ওদের কাছ থেকে জেনে নিতে শুরু করল পাক বাহিনীর সব গোপন তথ্য। আর কোন বাঁধা নেই। ভাগীরথী এখন নিয়মিত সামরিক ক্যাম্পে যায় আবার ফিরে আসে নিজ গ্রামে। এরি মধ্যে চতুরা ভাগীরথী তার মুল লক্ষ্য অর্জনের পথেও এগিয়ে গেল অনেকখানি। গোপনে মুক্তিবাহিনীর সাথে গড়ে তুলল ঘনিস্ট যোগাযোগ। এরপরই এল আসল সুযোগ। জুন মাসের একদিন ভাগীরথী খান সেনাদের নিমন্ত্রন করল তার নিজ গ্রামে। এদিকে মুক্তিবাহিনীকেও তৈরি রাখা হল যথারীতি। ৪৫ জন খানসেনা সেদিন হাসতে হাসতে বাঘমারা কদমতলা এসেছিল, কিন্তু তার মধ্যে মাত্র ৪/৫ জন ক্যাম্পে ফিরতে পেরেছে বুলেটের ক্ষত নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে। বাকিরা ভাগীরথীর গ্রামেই শিয়াল কুকুর শকুনের খোরাক হয়েছে।
এরপর আর ভাগীরথী ওদের ক্যাম্পে যায়নি। ওরা বুঝেছে এটা তারি কীর্তি। কীর্তিমানরা তাই হুকুম দিল জীবিত অথবা মৃত ভাগীরথীকে ধরিয়ে দিতে পারবে তাকে নগদ এক হাজার টাকা পুরুস্কার দেয়া হবে। কিন্তু ভাগীরথী তখনও জানত না ওর জন্য আরও দুঃসহ ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। একদিন রাজাকারদের হাতে ধরা পরল ভাগীরথী। তাকে নিয়ে এল পিরোজপুর সামরিক ক্যাম্পে। খান সেনাদের এবার ভাগীরথীর উপর হিংস্রতার পরীক্ষার আয়োজন করলো। এক হাটবারে তাকে শহরের রাস্তায় এনে দাঁড় করানো হলো জনবহুল চৌমাথায়। সেখানে প্রকাশ্যে তার অঙ্গাবরন খুলে ফেলল কয়েকজন খান সেনা। তারপর দুগাছি দড়ি ওর দুপায়ে বেঁধে একটি জীপে বেঁধে জ্যান্ত শহরের রাস্তায় টেনে বেড়ালো ওরা মহা-উৎসবে। ঘণ্টা খানিক রাজপথ পরিক্রমায় পর আবার যখন ফিরে এল সেই চৌমাথায় তখনও ওর দেহে সামান্য প্রানের স্পন্দন রয়েছে।

এবার তারা দুটি পা দুটি জীপের সাথে বেঁধে নিল এবং জীপ দুটিকে চালিয়ে দিল বিপরীত দিকে। ভাগীরথী দু ভাগ হয়ে গেল। সেই দু’ভাগে টূকরো হওয়া ভাগীরথী কে দু’জীপে আবার শহর পরিক্রমা শেষ করে জল্লাদ খানরা আবার ফিরে এল সেই চৌমাথায় এবং সেখানেই ফেলে রেখে গেল ওর বিকৃত মাংস খণ্ড গুলো। একদিন দুদিন করে মাংস গুলো ঐ রাস্তার মাটির সাথেই একাকার হয়ে গেল এক সময়। বাংলা মায়ের ভাগীরথী এমনি ভাবেই আবার মিশে গেল বাংলার ধূলিকণার সাথে ।

যৌন দাসী হিসেবে বাঙালি মেয়েদের বন্দী করে রাখার একটি ঘটনা প্রকাশিত হয় নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায়,২৫ অক্টোবর ১৯৭১ – One of the most horrible revelations concerns 563 young bengali women,some of 18,who have been held captive inside Dacca’s dingy military cantonment since the first five days of the fighting,Seized from University and Private Homes and forced into military brohees,the girls are all three to five months pregnant.
’৭১ এ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে পাকবাহিনীর একটি বিরাট ক্যাম্পে পরিণত করা হয়। এখানে বন্দী ছিলেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ছাত্রী মঞ্জিলা এবং তার দুই বোন মেহের বানু এবং দিলরুবা। তাদেরকে আরো ৫০ জন মেয়ের সাথে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়, সার্বক্ষণিক প্রহরায় থাকতো দুজন সশস্ত্র গার্ড। এই মেয়েগুলোকে ওই ক্যাম্পের সামরিক অফিসারদের খোরাক হিসেবে ব্যবহার করা হত। প্রতি সন্ধ্যায় নিয়ে যাওয়া হত ১০/১৫ জন মেয়েকে, এবং ভোরবেলা ফিরিয়ে দেয়া হত অর্ধমৃত অবস্থায়। প্রতিবাদ করলেই প্রহার করা হত বর্বর কায়দায়। একবার একটি মেয়ে একজন সৈনিকের হাতে আঁচড়ে দিলে তখনই তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই বন্দীশালায় খাবার হিসাবে দেয়া হত ভাত এবং লবন।
সাংবাদিক রণেশ মৈত্রের একটি অনুসন্ধান থেকে জানা যায়, রংপুর ক্যান্টনমেন্ট এবং রংপুর আর্টস কাউন্সিল ভবনটি নারী নির্যাতনের জন্য ব্যবহার করা হত। এখানে বন্দী ছিল প্রায় শত শত মেয়ে এবং প্রতিদিনই চলত নির্যাতন, যারা অসুস্থ হয়ে পড়ত তাদের হত্যা করা হত সাথে সাথেই। স্বাধীনতার পরে আর্টস কাউন্সিল হলের পাশ থেকে বহুসংখ্যক মহিলার শাড়ি, ব্লাউজ, অর্ধগলিত লাশ, এবং কংকাল পাওয়া যায়।

তথ্যসূত্রঃ

১) বীরাঙ্গনাদের কথা – সুরমা জাহিদ
২) ‘৭১ এর গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ – ডা. এম এ হাসান
৩) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীর অবদান – শাহনাজ পারভিন
৪) আমি বীরাঙ্গনা বলছি – নীলিমা ইব্রাহীম
৫) বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র,অষ্টম খন্ড,হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত
৬) icsforum.org
৭) A Tale of Millions – Rafiqul Islam BU
৮) Against Our Will : Men,Women and Rape – Susan Brownmiller
৯) Rape as a Weapon of War and it’s Long-term Effects on Victims and Society – Cassandra Clifford
১০) East Pakistan The Endgame – Brigadier A. R. Siddiq’
১১) Pritomdas Blog
১২) Probasipathok Blog

স্ট্যাটাস কার্টেসীঃ Ratul Eshrak

1014075_410949655685630_456489295_n

স্বাধীনতার পর ধর্ষিতা বাঙালী মহিলাদের চিকিৎসায় নিয়োজিত অষ্ট্রেলিয় ডাক্তার জেফ্রি ডেভিস গনধর্ষনের ভয়াবহ মাত্রা দেখে হতবাক হয়ে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে আটক পাক অফিসারকে জেরা করেছিলেন যে তারা কিভাবে এমন ঘৃণ্য কাজ-কারবার করেছিলো। অষ্ট্রেলিয় চিকিৎসক বিচলিত হলেও পাক অফিসারদের সাচ্চা ধার্মিক হৃদয়ে কোন রকম রেখাপাত ঘটেনি। তাদের সরল জবাব;

“আমাদের কাছে টিক্কা খানের নির্দেশনা ছিলো, যে একজন ভালো মুসলমান কখনোই তার বাবার সাথে যুদ্ধ করবে না। তাই আমাদের যত বেশী সম্ভব বাঙালী মেয়েদের গর্ভবতী করে যেতে হবে।”
ধর্ষণে লিপ্ত এক পাকিস্তানী মেজর তার বন্ধুকে চিঠি লিখেছে;

“আমাদের এসব উশৃঙ্খল মেয়েদের পরিবর্তন করতে হবে, যাতে এদের পরবর্তী প্রজন্মে পরিবর্তন আসে। তারা যেন হয়ে ওঠে ভালো মুসলিম এবং ভালো পাকিস্তানী”

আপনারা কি লক্ষ্য করেছেন টিক্কা খান কতোটা সফল ছিলো,পাকিস্তানীরা হেরে গেলেও আমাদের সাচ্চা পাকিস্তানী করে রেখে গেছে। রাস্তাঘাটে আজ পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলার লোকের অভাব হয় না,গোলামের জানাজায় লোকের অভাব হয়না। খেয়াল করবেন এরা সবসময় গুড মুসলিম আর গুড পাকিস্তানী শব্দদুটো একসাথে বসায়। অর্থাৎ “গুড মুসলিম=গুড পাকিস্তানী”। ইসলাম আর পাকিস্তানকে মিলিয়ে ফেলার এই
প্রবণতা দেশের একশ্রেণীর আবাল-চুতিয়াদের আছে। এরা ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মত পাকিস্তান
বিরোধী কথা বললেই জাত গেলো, ধর্ম গেলো ধোয়া তুলে জিগির চালাতে থাকে। আর সেই ধোঁয়ার ভেতর দিয়েই ধীরে ধীরে মাথা তুলতে থাকে জঙ্গিবাদের আস্ফালন।

1358518744.jpg

১৫ই আগষ্ট ১৯৭৫ |মোশতাক চক্রের ষড়যন্ত্রে বিপদগামী ফারুক রশীদ গংদের হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন স্বাধীন বাংলার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান |সারাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা ফুঁসতে থাকেন তীব্র ক্ষোভে |চেইন অফ কমাণ্ড ভেঙে পড়ায় তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয় মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের মাঝে|সেনাসদরের অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যেই গর্জন করে ওঠেন কর্ণেল শাফায়াত জামিল, “mostak is a bloody betrayar .i will overthrow him on the first chance i get “চারদিকে টানটান উত্তেজনা | অবশেষে ৩ থেকে ৭ নভেম্বর দ্রুত দৃশ্যপট বদলাতে থাকে। কয়েকজন মেজর আর

কর্নেলকে নিয়ে খন্দকার মোশতাক দেশে একটা অরাজকতা চালাচ্ছিলো।
এই অবস্থার অবসানের ও সেনাবাহিনীতে চেইন অফ কমাণ্ড ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধা অফিসাররা জেনারেল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে একটা ক্যু সংগঠিত করেন।বন্দী করে মোশতাক চক্রকে |কিন্তু, জেনারেল এম.এ.জি ওসমানীর মধ্যস্থতায় খন্দকার মোশতাক আহমেদ বেঁচে যায়। কিন্তু,জেলে নিশংসভাবে নিহত হন জাতীয় চার মহান নেতা। অন্যদিকে ওসমানীর মধ্যস্থতা মেনে নিয়ে জীবনের সবচেয়ে বড় মূল্যটাও পরিশোধ করেন খালেদ মোশাররফ। উল্লেখ্য যে, সেক্টর কম্যাণ্ডারগণ ও স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনার মূল নেতাদের কাছে খালেদ মোশাররফ-ই মুক্তিযুদ্ধকালীন দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছিলেন জেনারেল এম.এ.জি ওসমানী’কে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক করার জন্যে।কিন্তু বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র কায়েমের স্বপ্ন বিভোর জাসদ ও বিপ্লবী সৈনিক সংস্হা কর্ণেল তাহেরের নেতৃত্বে পাল্টা ক্যু সংগঠিত করে মাত্র ৪ দিনের মাথায়|
যাইহোক, খালেদ মোশাররফের মতোই কর্নেল তাহের জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা করেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে বিশ্বাস করে যা জীবন দিয়ে কড়ায় গণ্ডায় মূল্য দিতে হয় কর্নেল তাহেরকে। কর্নেল তাহেরের এই পাল্টা অভ্যূত্থান সফল হয় ৭ নভেম্বর। কর্নেল তাহের জেনারেল জিয়াউর
রহমানকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে প্রাণপণে মুক্ত করে নিয়ে আসেন। পাল্টা এই অভ্যূত্থানে ইষ্টবেঙ্গল
রেজিমেন্টের সৈন্যরা দাবার গুটির চালের মতো ব্যবহৃত হয়|বীরমুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফকে তাঁরই একান্ত ব্যক্তিগত দেহরক্ষী পিছন থেকে হত্যা করে ৭ নভেম্বর, ১৯৭৫।পাশাপাশি সমগ্র বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে সেনাবাহিনীর বিভক্ত দুই গ্রুপের মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষে শত শত সৈনিক, কর্মকর্তা,সিপাহি-জনতা নিহত ও আহত হয়।এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেনঃ কিংবদন্তী মুক্তিযোদ্ধা লে কর্নেল হায়দার বীর উত্তম, আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী কর্নেল নাজমুল হূদা বীর বিক্রমসহ কয়েকজন উচ্চপদস্থ মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসার।অবশেষে খালেদ মোশাররফকে হত্যার মধ্য দিয়ে তথাকথিত বিপ্লবের
নামে সূচনা হয় মুক্তিযোদ্ধা নিধনযজ্ঞের মিশন। জিয়া ক্ষমতা পেয়েই রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার করেন কর্ণেল তাহেরকে |গ্রেফতার করা হয় বিপ্লবী সৈনিক সংস্হার শত শত সৈনিককে |গোপন বিচারে রাতের আঁধারে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় অধিকাংশকে |শুরু হয় এদেশের পেছল পথে চলার পালা |

courtesy: 1. Wikipedia.

2.Bangladesh, a legacy of blood

3.খালেদ মোশাররফ বলছি -এম আর আখতার মুকুল

-রাজেশ পাল এর ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে

jamaat-Copy

জুনিয়র রিপোর্টার হিসাবে দুই রাজাকার নেতার সঙ্গে জীবনে অনেকবার কতা কইছি এরা হলেন মতিউর রহমান নিজামি আর কামারুজ্জামান এরা দুজনেই এর মাঝে ফাঁসির দন্ড প্রাপ্ত:) কামারুজ্জামানের ফাঁসির দড়িটা একটু বেশি কাছে এই দুইজনেই আমারে নানান কতা কইয়া বুঝাইবার চেষ্টা করতেন, !ইসলাম আর মুসলমানদের দেশ রক্ষার স্বার্থে তারা একাত্তরে পাকিস্তানের পক্ষে আছিলেন একটু ফ্রি মেজাজের আছিলেন কামারুজ্জামান। আমি তারে একদিন কইলাম, সব শুনলাম আপনার, কিন্তু এভাবে এত মেয়েকে রেপ করলেন কী করে ধর্মের নামে? আমি রেপ করি নাই বলে এক রকম দাঁড়িয়ে যান কামারুজ্জামান যেন ধর্ষন মামলায় আমিই তাকে গ্রেফতার করতে গেছি আর কী একাত্তরে দেশের মানুষের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো নিয়ে এদের মধ্যে কোন দিন কোন অনুতাপ দেখিনি! বা এসব অপরাধে যে তাদের বিচার হতে পারে, এমন উদ্বেগও দেখিনি কোন দিন! কিন্তু আল্লার মাইর বলে যে একটা কতা আছে! ধর্মের কল নড়ে বাতাসে! আজ কি সুন্দর একটার পর একটা ফাঁসির দড়ির সামনে চলে যাচ্ছে আল্লার হুকুমে জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।

তথ্যসূত্রঃ বিশিস্ট সাংবাদিক ফজলুল বারীর ফেসবুক থেকে

আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এসকে সিনহা নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির বেঞ্চ সোমবার কামারুজ্জামানের মামলার আপিলের রায় ঘোষণা করেন, যাতে ফাঁসির রায় বহাল রাখা হয়।

10641003_1496881333893940_8819119116508494029_n

রাজাকার মীর কাশেম আলী সম্পর্কে আমার বাবা ( ডঃ রুহুল আমিন ) বলেছেন – আমরা ১০ ডিসেম্বর চট্রগ্রাম ডালিম হোটেল ও ষ্টেডিয়াম এলাকা রেড দেই …

আমরা যখন ষ্টেডিয়াম এলাকা রেড দিয়ে ডালিম হোটেলে যাই ,তখন জঘন্য এবং মর্মান্তিক দৃশ্য আমরা দেখি ,ডালিম হোটেলের ২ তলায় বাম পাশের রুমে আমরা প্রায় হাজারের উপরে শুধু ব্রা , পেটিকোড , শাড়ী পাই ,
রুমের দেয়ালে দেয়ালে রক্তের ছোপ , এর পাশের রুমে ৩ টা মেয়ের নগ্ন ঝুলন্ত লাশ পাই ,৩ তলায় হল রুমে হতভাগ্য মানুষ গুলার হাত পেয়েছি, পা পেয়েছি , শুদু চোখ পেয়েছি শয়ের উপরে , হোটেলের পাশে ড্রেনে মানুষের মাথা পেয়েছি ,
ওই ডালিম থেকে এসে আমি এক সপ্তাহ কিছু খেতে পারিনি , ঘুমাতে পারিনি .…মীর কাশেমকে তখন আমরা অনেক খুজেছি ,পাই নাই ,পাইলে ..….…

এখন অনেকে বলে ৪৩ বছর হয়ে গেছে এগুলা নিয়া মাথা ঘামিয়ে কি লাভ ?? কিন্তু আমরা যা চোখে দেখেছি ,তা কি করে ভুলে যাবো ??? শহীদ পরিবারেরা কি করে ভুলে যাবে , আমরা যদি এ নরপশুর বিচার না চাই , নিশ্চুপ থাকি তাহলে খোদার আদালতে আমরা দোষী হয়ে থাকবো … ”